আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসা-বিমান বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়া শিশুদের চিকিৎসা

আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসা-বিমান বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়া শিশুদের চিকিৎসা  প্রদান করা খুব জরুরি। আজকের আর্টিকেলে আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসার ধরণ,আগুনে পোড়া রোগীর খাবারের ধরণ,তাদের মানসিক সাপোর্ট কিভাবে দেয়া হয় তা নিয়ে লেখা হয়েছে।

আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসা

সাম্প্রতিক বিমান বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়া শিশুদের চিকিৎসা বার্ন হাসপাতালে দেয়া হচ্ছে। কিভাবে তাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয় সে সম্পর্কে জেনে নিন।   

পেজ সূচিপত্রঃ আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসা-বিমান বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়া শিশুদের চিকিৎসা  

  • আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসা-বিমান বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়া শিশুদের চিকিৎসা  
  • শরীরে হঠাৎ আগুন লাগলে কি করবেন?
  • নিউট্রিশন ফর বার্ন বা পোড়া রোগীর জন্য পুষ্টি 
  • আগুনে পোড়া রোগীর পুষ্টিগত চাহিদা পূরণ   
  • পোড়া রোগীর যে সমস্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
  • পোড়া রোগীর যে সমস্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
  • আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
  • লেখকের মন্তব্যঃআগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসা-বিমান বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়া শিশুদের চিকিৎসা   

আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসা

আগুনে পুড়ে গেলে তাৎক্ষণিক করণীয় দ্রুত আগুনের উৎস থেকে সরিয়ে আনতে হবে। পরনের কাপড়ে আগুন লাগলে মোটা কাপড় জড়িয়ে ধরে আগুন নিভাতে হবে। মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি দিয়ে  আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে হবে। শরীরের যে অঙ্গ পুড়ে গেছে সেখানে প্রচুর পরিমাণে পানি ঢালতে হবে। 

পুড়ে যাওয়া সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে যথাঃ প্রথম ডিগ্রী, দ্বিতীয় ডিগ্রি এবং তৃতীয় ডিগ্রি।

প্রথম ডিগ্রী- তাপ লেগে গেছে শরীরের চামড়া লাল হয়ে যায়। কিন্তু কোন ফোসকা পড়ে না।

দ্বিতীয় ডিগ্রি- চামড়া পুড়ে ফোসকা পড়ে যায়।

তৃতীয় ডিগ্রী- পুড়ে যাওয়ার গভীরতা যে আমরা ভেদ করে মাংস এবং হাড় পর্যন্ত পুড়ে যায়। 

প্রথম ডিগ্রী পোড়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পানি ঢাললেই হবে আর কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে পানি ঢালতে থাকলে একসময় জ্বালা কমে যাবে। 

দ্বিতীয় ডিগ্রী পোড়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় ধরে পানি ঢালতে হবে প্রায় এক থেকে দুই ঘন্টা পর্যন্ত পানি ঢালতে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে পুরস্কার গলানোর কোন প্রয়োজন নেই এভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার পর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

তৃতীয় ডিগ্রী পোড়ার ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বে আক্রান্ত স্থানে বেশি বেশি পানি ঢালতে হবে । এই ধরনের বিপদের সম্মুখীন হলে আক্রান্ত স্থানে এন্টি বার্ন ক্রিম লাগাতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। 

শরীরে হঠাৎ আগুন লাগলে কি করবেন?

শরীরে হঠাৎ আগুন লাগলে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াদৌড়ি করা যাবে না থেমে যাবেন। তাৎক্ষণিকভাবে মাটিতে শুয়ে পড়ুন এবং হাত দিয়ে মুখমণ্ডল ঢেকে ফেলুন।হাত দিয়ে মুখমণ্ডল ঢাকলে আগুনের শিখা এবং ধোঁয়া শ্বাসনালী এবং ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারবে না। মাটিতে গড়াগড়ি দিলে অক্সিজেন আগুনের সংস্পর্শে যেতে বাধা পাবে এবং আগুন নিভে যাবে। 

শরীরে হঠাৎ আগুন লাগলে করণীয় কাজ গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো- 

  • চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন মলম বা ক্রিম পোড়া স্থানে লাগাবেন না।
  • পোড়া জায়গায় ফোসকা হলে তা ফুটো করবেন না।
  • পোড়া স্থানে বরফ তুলা ডিম পেস্ট ইত্যাদি লাগাবেন না।
  • পোড়া জায়গায় যেন আঘাত বা ঘষা না লাগে ,সেদিকে খেয়াল রাখবেন। 

নিউট্রিশন ফর বার্ন বা পোড়া রোগীর জন্য পুষ্টি   

নিউট্রিশন ফর বার্ন বা পোড়া রোগীর জন্য পুষ্টির প্রয়োজন প্রচুর। 

একজন আগুনে পোড়া রোগীর পোড়ার ক্ষতির পরিমাণ ভিত্তি করে এটিকে তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়

  • ফার্স্ট-ডিগ্রি বার্ন বা প্রথম-ডিগ্রী পোড়ার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শুধু চামড়ার উপরের স্তর। চামড়ার উপরের স্তর বা এপিডার্মিস এর ক্ষতি হয়। সাধারণত ব্যথা হয় লালচে ভাব থাকে এবং হালকা ফোলা ভাব দেখা দেয়। 
  • সেকেন্ড-ডিগ্রি বার্ন বা দ্বিতীয়-ডিগ্রি পোড়ার ক্ষেত্রে ত্বকের উপরে স্তর এবং নিচের স্তর অর্থাৎ ডার্মিস  ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শরীরের ফোসকা পড়ে ব্যথা অনেক বেশি হয় এবং ত্বকে পানি ভর্তি অনেক ফোসকা দেখা যায়। 
  • থার্ড-ডিগ্রি বার্ন বা তৃতীয়-ডিগ্রি পোড়ার ক্ষেত্রে ত্বকের সব স্তর নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি বেশি স্নায়ু এবং হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পোড়া জায়গাটি সাদা বাদামী বা কয়লার মত কালো হয়ে যায়। ব্যথার অনুভব নাও হতে পারে,স্নায়ু নষ্ট হওয়ার কারণে অনুভুতি বোঝা যায় না। এইসব রোগীর গায়ে ইনফেকশন হওয়া খুবই সাধারণ বিষয়। 

আগুনে পোড়া রোগীর পুষ্টিগত চাহিদা পূরণ   

আগুনে পোড়া রোগীর পুষ্টিগত চাহিদা পূরণ করতে হয়। অতি মাত্রায় বার্ন বা পুড়ে গেলে ইনফেকশন হয়ে রোগী আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এই ইনফেকশন কমাতে, ক্ষত সারাতে, সংক্রমণ প্রতিরোধে ওজন বেশি ধরে রাখতে এসব রোগীর দ্রুত চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করা খুব জরুরী।  এখন চলুন বার্ন বা পোড়া রোগীর পুষ্টিগত চাহিদা গুলো সম্পর্কে জেনে নিই।  

  • ক্যালোরিঃসাধারণত এর তুলনায় বেশি ক্যালোরির প্রয়োজন হয় কারণ তখন দেহের মেটাবলিক রেট বেড়ে যায়। রোগীর দৈনিক প্রয়োজন ভেদে ২০০০ থেকে ৩৫০০ কিলো ক্যালরি খাবার দেয়া হয়। শিশু হলে দৈনিক ১৮০০ থেকে ২৫০০ কিলো ক্যালরি খাবার দেয়া হয়। এতে করে তারা শরীরে শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে এবং অতি দ্রুত সুস্থ হতে পারবে।
  • প্রোটিনঃবার্ন রোগীর পোড়ার কারণে দেহের প্রোটিন ভেঙে যায়। ফলে এদের সাধারণ মানুষের তুলনায় প্রোটিনের চাহিদা বেশি থাকে। বার্ণের স্টেজের উপর ভিত্তি করে রোগীকে ১.৫-২ থেকে ২.৫ গ্রাম/কেজি/দিন প্রোটিন দেয়া হয়। সে ক্ষেত্রে রোগীকে প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন দেওয়া উত্তম যেমন- ডিম,মাছ,মুরগি,দুধ,পনির, টফু ইত্যাদি।
  • তরল ইলেকট্রোলাইট ও ভিটামিনঃএকজন রোগীর দেহের পানি ও খনিজ পদার্থ ইলেকট্রোলাইটিস ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। তাই তাদের শরীরে সোডিয়াম,পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম ইত্যাদির উপস্থিতি  পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ে। এর উপর ভিত্তি করে রোগীকে প্রচুর পানি,স্যালাইন,ডাবের পানি,দুধ ইত্যাদি দেওয়া হয়ে থাকে।

আগুনে পোড়া রোগীর খাবার

আগুনে পোড়া রোগীর খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।  এছাড়াও নিম্নোক্ত ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার সমূহ বার্ন রোগীর জন্য প্রয়োজন।

ভিটামিন সি ক্ষত সারানোর জন্য কাজ করে যেমন- লেবু আমলকি কমলা ইত্যাদি ফল রোগীকে খাওয়াতে হয়।

ভিটামিন-এ কোষ গঠনের জন্য কাজ করে যেমন- গাজর,মিষ্টি আলু,কলিজা ইত্যাদি রোগীকে খাওয়াতে হয়।

ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার যেমন- বাদাম, বিজ ইত্যাদি রোগীকে খাওয়াতে হয়।

জিংক ত্বক সারানোর জন্য কাজ করে। তাই জিংক সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাংস,ডাল ইত্যাদি রোগীকে খাওয়াতে হয়।

আয়রন শরীরে রক্ত তৈরি এবং অক্সিজেন বহন করতে সাহায্য করে। তাই আয়রন যুক্ত খাবার যেমন-  কলিজা,খেজুর,পালং শাক ইত্যাদি রোগীকে খাওয়াতে হয়।

ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি হাড় শক্ত রাখে যেমন- দুধ,দই ইত্যাদি খাবার খাওয়াতে হয় এবং পোড়া স্থানে রোদ লাগাতে হয়।  

পোড়া রোগীর যে সমস্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে

অতিরিক্ত ঝাল যুক্ত তেল যুক্ত এবং মসলাযুক্ত খাবার যেমন শর্ট ড্রিংক চকলেট প্যাকেট যত খাবার অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।

আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

২-৩ ঘন্টা পর পর ছোট পরিমানে অল্প করে খেতে দিন।

ওজন ক্ষত ও মলমূত্র নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন।

প্রোটিন ও তরল গ্রহণে জোর দিন। 

বিমান বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়া শিশুদের চিকিৎসা

বিমান বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়া শিশুদের চিকিৎসায় কিভাবে সাহায্য করা হচ্ছে জানতে চান? তাহলে এই আর্টিকেলটি পড়ুুন। একটি দুর্ঘটনায় পুড়ে যাওয়া একটি শিশুর জন্য জীবন যেন এক মুহূর্তেই সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। তখন সেই শিশুটিকে শুধুমাত্র দগ্ধ হওয়া থেকে বাঁচানোই নয়, তাকে আবারো হাঁটতে, হাসতে এবং জীবন ফিরে পেতে সহায়তা করাই চিকিৎসকদের মূল কাজ হবে।   

দগ্ধ হওয়া শিশুদের চিকিৎসা যেভাবে চলছে 

দগ্ধ হওয়া শিশুদের চিকিৎসা যেভাবে চলছে তা বর্ণনা করছি। অক্সিজেন দেওয়া হয় শরীরে তরল স্যালাইন দেওয়া হয় যাতে শরীরের পানির ঘাটতি না হয়। আগুনে পোড়া জায়গায় জীবনে মুক্ত করে বিশেষ ধরনের ওষুধ লাগানো হয়। প্রতিদিন অত্যন্ত সতর্কতার সাথে তাদের ব্যান্ডেজ বদলানো হয়। পুড়ে যাওয়া গভীর হলে তখন স্কিন গ্রাফট বা চামড়া প্রতিস্থাপন করতে হয়।

শিশুর ব্যথা কমাতে শিশুদের জন্য উপযোগী  ব্যথানাশক ওষুধ দেয়া হয়। এন্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে সংক্রমণ রোধ করা হয়। যদি শরীর দুর্বল হয়ে যায় তখন রোগীকে রক্ত দিতে হয়। রক্তের হিমোগ্লোবিন লেভেল চেক করে ব্লাডের রিকুইজিশন দেয়া হয়। 

শরীরে যেন শক্তি ফিরে পায় সেজন্য খাবার দেওয়া হয়। শিশু ভয় পেয়ে গেলে মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সিলর দ্বারা তাকে কাউন্সিলিং করা হয় এবং তাকে সাহস দেয়া হয়।  

আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসা

একটি শিশুর শুধু ক্ষত সারিয়ে তুলনায় তার শরীরের অঙ্গগুলো যেন আগের মতই কাজ করি সেজন্য ফিজিওথেরাপি এবং গঠনমূলক সার্জারি দেওয়া হয়।

এই শিশুরা কেবল চিকিৎসা সেবা নয়, ভালোবাসা এবং সাহস চায়। তাদের জন্য আপনার একটু দোয়া, সমর্থন বা সাহায্য  অনেক বড় বিষয় হতে পারে।   

লেখকের মন্তব্যঃআগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসা-বিমান বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়া শিশুদের চিকিৎসা 

 আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসা-বিমান বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়া শিশুদের চিকিৎসা কিভাবে করা হয় তা এই আর্টিকেলে অনেক ভালোভাবে বুঝানো হয়েছে। আগুনে পোড়া রোগীর যত্ন,চিকিৎসা,পুষ্টিকর খাবার, সতর্কীকরণ, যে গুলো খাবার পরিহার করা প্রয়োজন ইত্যাদি বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছি। আশাকরি এটি আপনাদের উপকারে আসবে। যদি আর্টিকেলটি ভালো লাগে তবে বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

hiramonsdream er নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url