পাকা কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা

পাকা কলা খাওয়ার ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানাতে আজকের আর্টিকেল লেখা হয়েছে। পাকা কলা খাওয়ার ১০টি আশ্চর্যজনক উপকারিতা ও পাকা কলা খাওয়ার ১০টি অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো। এগুলো বিস্তারিত জেনে তারপর আপনি এই ফল খেলে বেশি উপকৃত হবেন। 

পাকা কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা

কারণ এই আর্টিকেল পুরোটা পড়ার পর আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে আপনার কত টুকু খাওয়া প্রয়োজন অথবা এটা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কিনা তা বুঝতে পারবেন।   

পেজ সূচিপত্রঃপাকা কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা 
  • পাকা কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা
  • পাকা কলা কিভাবে হজমে সহায়তা করে
  • পাকা কলা শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে
  • হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পাকা কলা 
  • মন মেজাজকে উন্নত রাখতে পাকা কলা 
  • রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করতে পাকা কলা
  • কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কলার ব্যবহার
  • হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করতে পাকা কলার ভূমিকা
  • আলসার নিরাময়ে পাকা কলা
  • প্রাকৃতিক এন্টাসিড হিসেবে পাকা কলার কাজ
  • ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় পাকা কলা
  • পাকা কলাকে সুপার ফুড বলা হয় কেন 
  • পাকা কলা খেতে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত  
  • লেখকের মন্তব্যঃ পাকা কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা

পাকা কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা

পাকা কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এখন বিস্তারিত আলোচনা করবো। নিচে এগুলো নিয়ে বিশদভাবে লেখা হলো- 

পাকা কলা খাওয়ার ১০টি উপকারিতাঃ

প্রতিদিন ১-২ টি পাকা কলা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। 
পাকা কলা খাওয়ার ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে নিচে দেয়া হলোঃ
  1. হৃদযন্ত্র ভালো রাখে।
  2. কিডনি সুস্থ রাখে।
  3. শরীরে শক্তি যোগায়।
  4. খাদ্য হজমে সহায়তা করে।
  5. মানসিক চাপ কমায়।
  6. শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি করে।
  7. পাকস্থলির ক্যান্সার রোধ করে।
  8. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  9. সুনিদ্রা আনয়ন করে।
  10. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

পাকা কলা খাওয়ার ১০ টি অপকারিতাঃ

পাকা কলা বেশি পরিমাণে খেলে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। পাকা কলা খাওয়ার ১০টি অপকারিতা সম্পর্কে নিচে দেয়া হলোঃ  
  1. রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে 
  2. ওজন বৃদ্ধি করে
  3. পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়
  4. মাইগ্রেন এর সমস্যা 
  5. দাঁতের ক্ষয় রোগ হয়
  6. এলার্জির প্রতিক্রিয়া হয় 
  7. পটাশিয়ামের উচ্চমাত্রা 
  8. ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া
  9. পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা
  10. তন্দ্রাচ্ছন্নতা ভাব 

পাকা কলা কিভাবে হজমে সহায়তা করে

পাকা কলা কিভাবে হজমে সহায়তা করে তা কি আপনি জানেন? জেনে রাখুন-পাকা কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে,যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। তাই পাকা কলাকে এডস ডাইজেশন বলে। পাকা কলা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং এটি নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে। 

পাকা কলা শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে


পাকা কলা শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে তাই একে সোর্স অফ এনার্জি বলা হয়। পাকা কলায় থাকা প্রাকৃতিক শর্করা যেমনঃ সুক্রোজ এবং গ্লুকোজ দ্রুত শরীরে শক্তি সরবরাহ করে এবং পরে চমৎকার একটি শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে থাকে।  


হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পাকা কলা

হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পাকা কলা বেশ কার্যকর। কলায় উচ্চ পটাশিয়াম এবং কম পরিমাণে সোডিয়াম থাকে, যার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে।
পাকা কলা খাওয়ার ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা

এটি হৃদপিন্ডের রোগ বা কার্ডিওভাসকুলার রোগ যেমনঃ স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতেও সহায়তা করে। নিয়মিত পাকা কলা খেলে এই রোগগুলি থেকে ভালো থাকা যায়। 

মন মেজাজকে উন্নত রাখতে পাকা কলা

মন মেজাজকে উন্নত রাখতে পাকা কলা খুব উপকারি। পাকা কলায় ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো এসিড থাকে যা শরীরে সেরোটোনিন হরমোনে রূপান্তরিত হয়।  এটি একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা মন মেজাজ ভালো রাখতে,উদ্বেগ কমাতে এবং ভালো  ঘুম হতে সাহায্য করে।   


রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করতে পাকা কলা

রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করতে পাকা কলা সহায়তা করে। কোকাকোলায় থাকা আইরন এর উৎপাদনে সাহায্য করে। এটি অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং এর লক্ষণ গুলি কমাতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। 

কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কলার ব্যবহার

কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কলার ব্যবহার করা হয়। পাকা কলাতে পটাশিয়াম থাকায় এটি কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত পাকা কলা খেলে কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। 


হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করতে পাকা কলার ভূমিকা


হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করতে পাকা কলার ভূমিকা আছে। পাকা কলা ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভালো উৎস।এই ম্যাগনেসিয়াম হাড়কে মজবুত করে এবং হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি ক্যালসিয়াম শোষণেও সাহায্য করে থাকে।  


আলসার নিরাময়ে পাকা কলা

আলসার নিরাময়ে পাকা কলা সাহায্য করে। পাকা কলাতে থাকা কিছু কার্যকর উপাদান পেটের এসিডের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পাকস্থলীর ভেতরের আস্তরণ কে রক্ষা করতে পারে।  এটি পেটের আলসার প্রতিরোধে এবং নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে।  

প্রাকৃতিক এন্টাসিড হিসেবে পাকা কলার কাজ

প্রাকৃতিক এন্টাসিড হিসেবে পাকা কলার কাজ বেশ চমকপ্রদ। পাকা কলা প্রাকৃতিক এন্টাসিড হিসেবে কাজ করে এবং এটি বুক জ্বালা-পোড়ার বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স এর উপশম করতে পারে। 

ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় পাকা কলা

ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় পাকা কলা কাজ করে। পাকা কলায় এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি থাকে জাতকের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। এটি ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে মসৃণ করতে এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। পাকা কলার খোসাও ত্বকের কিছু সমস্যায় ব্যবহার করা হয়।

পাকা কলাকে সুপার ফুড বলা হয় কেন

পাকা কলাকে সুপার ফুড বলা হয় কেন তার কারণ বুঝিয়ে বলছি। যে খাদ্য খেলে মানুষ পরিপূর্ণ পুষ্টিগুণ লাভ করে থাকে তাকে সুপার ফুড বলা হয়। যেহেতু পাকা কলা খেলে আমরা ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন,মিনারেল,আয়রন,ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম,সোডিয়াম,ফাইবার ইত্যাদি পুষ্টিগুণ লাভ করে থাকি তাই পাকা কলাকে সুপার ফুড বলা হয়। পাকা কলা খেলে ক্ষুধা নিবারণ হয় এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়।  
পাকা কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা

উপরোক্ত উপকারিতা গুলোর কারণে কলা কে একটি সুপার ফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়,যা দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। 

পাকা কলা খেতে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত  

পাকা কলা খেতে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবার তা আলোচনা করবো। পাকা কলা সাধারণত স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে পরিচিত হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর অতিরিক্ত সেবনে বা নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থায় এটি কিছু সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
উচ্চ রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধিঃ পাকা কলায় প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকে বিশেষ করে ফ্রুকটোজ।অতিরিক্ত পাকা কলা খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে যেতে পারে এবং বিপদ হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি পরিমাণে পাকা কলা খাওয়া উচিত নয়। 

  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধিঃ পাকা কলায় ক্যালরি তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে পাকা কলা খেলে তা ওজন বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। যাদের মেদ আছে বা যারা বেশি স্বাস্থ্যবান তাদের ১-২টির বেশি পাকা কলা খাওয়া যাবে না। বেশি খেলে আরও বেশি ওজন বাড়তে পারে। 
  • পেটের সমস্যাঃ পাকা কলায় ট্রিপটোফ্যান থাকে,যা কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পেটে গ্যাস ফোলা ভাব বা কোষ্ঠকাঠিন্যর কারণ হতে পারে বিশেষ করে যাদের হজম শক্তি খুব দুর্বল থাকে তাদের জন্য। আবার পাকা কলায় বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকায় কিছু লোকের পেট খারাপ হতে পারে। এসব সমস্যা হলে এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। 
  • মাইগ্রেনের সমস্যাঃ কিছু গবেষণা অনুযায়ী পাকা কলায় টাইরামিন নামক এক প্রকার অ্যামিনো এসিড থাকে,যা সংবেদনশীল ব্যক্তিদের মাইগ্রেন সমস্যা বা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। তাই যে সকল ব্যক্তিরা মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন তারা পাকা কলা খেতে সাবধান থাকবেন। 
  • দাঁতের ক্ষয়ের সমস্যাঃ পাকা কলায় চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এটি দাঁতের এনামেলের ক্ষয় ঘটাতে পারে। বিশেষ করে যদি এটি খাওয়ার পর ভালোভাবে দাঁত পরিষ্কার করা হয় তাহলে। 
  • এলার্জির প্রতিক্রিয়ায়ঃ কিছু মানুষের কলার প্রতি এলার্জি দেখা যায়। টাকা কলা খেলে অনেকের ঠোঁট জিহবা বা গলায় চুলকানি, ফুসকুড়ি বা শ্বাসকষ্টের মতো এলার্জি এর লক্ষণ দেখা যায়। যাদের এ ধরনের সমস্যা হয় তারা এটি খেতে সাবধানতা অবলম্বন করুন। 
  • পটাশিয়ামের উচ্চমাত্রার প্রভাবঃ পাকা কলায় পটাশিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে এটি স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তবে কিডনি  ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পটাশিয়াম বা হাইপার ক্যালিমিয়ার সৃষ্টি করে। এতে সমস্যা হতে পারে কারণ তার শরীর অতিরিক্ত পটাশিয়াম নির্গত করতে পারে না। তাই কিডনি রোগীরা পাকা কলা খেতে সাবধান থাকুন। 
  • ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়াঃ বিটা-ব্লকার এবং এ সি ই ইনহিবিটর-এর মতো কিছু রক্তচাপের ঔষধ পটাশিয়ামের মাত্রাটাকে বহু গুণে বাড়াতে পারে। যারা এ ধরনের ওষুধ সেবন করেন তাদের অতিরিক্ত পাকা কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। 
  • তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব থাকলেঃ পাকা কলায় ট্রিপটোফ্যান এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যার শরীরকে শিথিল করতে সাহায্য করে। তাই দিনের বেলায় অতিরিক্ত পরিমাণে পাকা কলা খেলে কিছু মানুষের জন্য তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব বা ঘুমঘুম ভাব হতে পারে। তাই ঝিমুনির প্রভাব থেকে বাঁচতে চাইলে বেশি পরিমাণে কলা খাওয়া থেকে সাবধান থাকুন।
  • পুষ্টির ভারসাম্যহীনতায়ঃ অতিরিক্ত পাকা কলা খেলে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার সুযোগ কমে যেতে পারে। এতে দীর্ঘমেয়াদি পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ শুধুমাত্র কলা খেয়ে শরীরের সব পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই অল্প পরিমাণে পাকা কলা খেতে হবে। 

লেখকের মন্তব্যঃ পাকা কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা

পাকা কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা-এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা সচেতনতার সাথে পাকা কলা খান এবং এই পুষ্টিকর ফলের উপকারিতা গ্রহণ করুন। পাকা কলা খেতে যাদের সমস্যা হয় তারা এটি সতর্কতার সাথে গ্রহণ করুন। এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের কাছে শেয়ার করুন। আপনার উপকার হলেই আমাদের সার্থকতা,ধন্যবাদ।   


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

hiramonsdream er নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url