জন্ডিস এর লক্ষণ কি? - জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার

জন্ডিস এর লক্ষণ কি? - জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আপনি কি জানেন? প্রাণঘাতি এ রোগ থেকে বাঁচতে চাইলে আজকের আর্টিকেলটি পড়ুন। জন্ডিসের লক্ষণ কি? জন্ডিসের লক্ষণ ও প্রতিকার - জন্ডিস এর খাবার - জন্ডিস হলে করণীয় কি? 

জন্ডিসের চিকিৎসা জন্ডিসের ঔষধ, জন্ডিস কত প্রকার,  জন্ডিস হওয়ার কারণ কি? জন্ডিস থেকে বাঁচার উপায় কি? এসব নিয়ে বিস্তারিত লেখা হয়েছে আর্টিকেলটি। তাহলে আর দেরি না করে সঠিক তথ্য গুলো জেনে নিন এবং নিজের জীবন ও পরিবারকে বাঁচান।  

পেজ সূচিপত্রঃ জন্ডিস এর লক্ষণ কি? - জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার 

জন্ডিসের লক্ষণ কি

জন্ডিসের লক্ষণ ও প্রতিকার - জন্ডিস এর খাবার - জন্ডিস হলে করণীয়

জন্ডিসের চিকিৎসা জন্ডিসের ঔষধ

জন্ডিস কত প্রকার

 জন্ডিস হওয়ার কারণ কি? 

জন্ডিস থেকে বাঁচার উপায় কি? 

লেখকের শেষ মন্তব্যঃ জন্ডিস এর লক্ষণ কি? - জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার  

জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও কারণ

জন্ডিসের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল চোখ ও প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়া। জন্ডিসের মাত্রা বেড়ে বা বেশি হলে পুরো শরীর গাড়ো হলুদ বর্ণ ধারণ করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, পায়খানা সাদা হয়ে যায় , চুলকানি, যকৃত শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ জন্ডিস এর কারনে দেখা যায়। তাছাড়া শারীরিক দুর্বলতা, জ্বর, বমি, পেট ব্যথাত,ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি তো লেগেই থাকে। ডাক্তারদের মতানুসারে জন্ডিসকে আমরা সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করতে পারি, যথা-

১, হেপারটোস্যালুলার

২। অ্যাবট্রাকশন 

৩।হেমলাইটিক অ্যানিমিয়া

জন্ডিসের আক্রান্ত হলে সাথে সাথেই ডাক্তার দেখানোর মাধ্যমে এর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।

জন্ডিসের প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক

সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, জীবাণুমুক্ত খাবার ও পানীয় গ্রহণ করার মাধ্যমে জন্ডিসের আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। রাস্তাঘাটে খোলা পানিআ,ফলের জুস ইত্যাদি খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান বা বিরত থাকতে হবে। সময়মতো হেপাটাইটিস ও এ এবং বি এর প্রতিষেধক টিকা নিতে হবে। হেপাটাইটিস বি এর ক্ষেত্রে প্রথম মাসে একটি দ্বিতীয় মাসে একটি বা ছয় মাসের মধ্যে একটি ডোজ দেওয়া হয় এটা আপনারা গ্রহণ করতে পারেন।

হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে একটি ডোজই সাধারণত যথেষ্ট। আর দুই ক্ষেত্রেই পাঁচ বছর পর পর বুস্টার টিকা দেওয়া হয়ে থাকে। এই বুস্টার টিকার দাম বেসরকারিভাবে সাধারণত ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা হয়ে থাকে তবে জন্ডিসের একবার হয়ে গেলে টিকা নিয়ে কোন লাভ হয় না তাই সুস্থ থাকা অবস্থাতেই এই টিকা নিয়ে নিতে হবে। 

জন্ডিস আসলে কোন রোগ নয়, বরং বেগতিক শরীরের উপসর্গ মাত্র। ত্বক হলদেটে হয়ে যায়, চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়। শরীরে বিলিরুবিনের উৎপাদন বেড়ে যায়। একবার জন্ডিসের প্রভাব শরীরে পড়া মানে তার যকৃত আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। জন্ডিসের উপসর্গ হলো পেটে ব্যথা, সারাক্ষণ বমি বমি ভাব, খিদে কম পাওয়া, বমি হওয়া, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি। জন্ডিস কিন্ত শুধুমাত্র ওষুধের মাধ্যমে সারানো সম্ভব নয়। 

জন্ডিসের রোগীদের খাওয়া-দাওয়ার দিকে অনেক নজর দিতে হয়। তেল ও মসলাদার খাবার খাওয়া একেবারে নিষেধ। যে খাবার সহজে হজম হয় এমন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত। ওষুধের পাশাপাশি কি কি খাবার জন্ডিস নিরাময়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপযোগী সেটা জেনে রাখুন।  

জন্ডিস হলে কি ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

জন্ডিস হলে কি ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে তা এবার আলোচনা করবো। জন্ডিসের অনেক কারণ রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে লিভারের রোগ। লিভার বিলিরুবিনকে ভেঙে ফেলার জন্য দায়ী। লিভারের রোগ যেমন হেপাটাইটিস বা সিরোসিস বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। কিছুর রক্তের রোগ, যেমন- থ্যালাসেমিয়া বা সিকেল সেল অ্যানিমিয়া থাকলে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। 

জন্ডিসের চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণ এবং তীব্রতার উপর। যদি জন্ডিসের কারণে লিভারের রোগ হয় তাহলে চিকিৎসায় ওষুধ বা সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। যদি জন্ডিসের কারণ পিত্তন আলীর সমস্যা হয় তাহলে চিকিৎসায় পিত্তনালীর বাধা দূর করা বা পিত্তথলি অপসারণ করা প্রয়োজন হতে পারে। যদি জন্ডিসের কারণ রক্তের রোগ হয় তাহলে চিকিৎসায় রক্তের রোগের চিকিৎসা প্রয়োজন।

জন্ডিস হলে কি ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে তা নিচে দেয়া হলো- 

  • যকৃতের কার্যকারিতা এবং কোলেস্টেরল পরীক্ষা
  • প্রথম্বিন টাইম
  • পেটের আল্ট্রা সাউন্ড
  • রক্ত পরীক্ষা
  • প্রস্রাব পরীক্ষা
  • যকৃতের বায়োপসি

কি কি ধরনের চিকিৎসা আছে জন্ডিসের জন্য?

জন্ডিসের ঘরোয়া চিকিৎসার মধ্যে অনেকেই কবিরাজের চুন দিয়ে হাত ধোয়া, ডাবপড়া, মাথায় মালা পরানো এগুলো চিকিৎসা নিয়ে থাকে, এসব কিছুই শুধুই ধোঁকা। এই চিকিৎসা গুলি জন্ডিসের কারণ নির্ণয় বা চিকিৎসায় কোনই ভূমিকা পালন করে না। তাই জন্ডিস হলে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করুন।  জন্ডিস সাধারণত রোগের ধরন মাত্রা রোগীর বয়সের উপর চিকিৎসা নির্ভর করে। নিচে কিছু ভালো চিকিৎসার কথা বলা হলো-

  • জন্ডিস হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে ওষুধ সেবন এবং অন্যান্য সকল বিষয় মেনে চলতে হবে।
  • শিশুদের ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিসের ক্ষেত্রে কিছুদিনের জন্য লাইট থেরাপি চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। 
  • নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে বিলিরুবিনের মাত্রা মারাত্মক বা অধিক আকার ধারণ করলে রক্ত পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে খুব স্বাভাবিকভাবেই।

জন্ডিস হলে করণীয় কি? 

জন্ডিস হলে করনীয় কি? আপনি কি জানেন? প্রথমে করনীয় হলো মনোবল শক্ত করে ভালো ভাবে চিকিৎসা নেয়া। জন্ডিস হলে করনীয় কাজগুলো সম্পর্কে নিচে উল্লেখ করা হলো-  

  • জন্ডিস রোগের যত্ন আপনি বাড়িতে বসে নিন
  • চিকিৎসার আগে জন্ডিস হওয়ার কারণগুলো খুঁজে বের করুন। 
  • তারপর কারণ অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • জন্ডিস রোগীকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে দিন এবং প্রচুর তাজা ফল খেতে দিন।
  • রান্না সহ বিভিন্ন কাজে টিউবয়েলের বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করুন।
  • হাতের নখ সব সময় কেটে ছোট ছোট রাখতে হবে। এতে করে হাতের নখে ময়লা ও জীবাণু থাকবে না।
  • রুগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে দিন।
  • খাবার দাবার সব সময় সতর্কতার সাথে ঢেকে রাখুন।
  • অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে হবে।

লেখকের শেষ মন্তব্যঃ জন্ডিস এর লক্ষণ কি? - জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার 

বাংলাদেশের জন্ডিসের প্রাদুর্ভাব তুলনামূলকভাবে বেশি। জনসচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে এটি আরো বাড়তে পারে। ডব্লিউ এইচ ও এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস বি টিকা নেওয়া জন্ডিস প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। তাই জনস্বাস্থ্য পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো জরুরী। 

জন্ডিস আসলে একটি উপসর্গ যা শরীরের বড় কোন সমস্যা ইঙ্গিত দেয়। এটি অবহেলা করা মারাত্মক ভুল। সময়মতো ডাক্তার দেখানো, টিকা গ্রহণ করা, বিশুদ্ধ পানি পান করা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা জন্ডিস প্রতিরোধের প্রধান উপায়। নিজের স্বাস্থ্য ও পরিবারের সুরক্ষার জন্য আজ থেকে সচেতন হোন। 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

hiramonsdream er নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url