ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার-কারণ,যত্ন ও প্রতিরোধ
ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার-কারণ,যত্ন ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জানতে চাইলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটিতে ভাইরাস জ্বরের সাধারণ লক্ষণ, ঘরে বসে যত্ন, চিকিৎসকের পরামর্শ, প্রতিরোধের উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
যদি সুস্থ থাকতে চান তবে আতংকিত না হয়ে সচেতন হোন এবং পুরো আর্টিকেলটি পড়ে সুষ্ঠু ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। বর্তমানে ভয়াবহ ভাইরাস জ্বর চলছে সতর্ক থাকুন এবং নিজের ও পরিবারের যত্ন নিন।
পেজ সূচিপত্রঃ ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার-কারণ,যত্ন ও প্রতিরোধ
- ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার-কারণ,যত্ন ও প্রতিরোধ
- ভাইরাস জ্বরের কারণ
- ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ
- ভাইরাস জ্বর নির্ণয়ের উপায়
- ভাইরাস জ্বরের চিকিৎসা ও প্রতিকার
- ভাইরাস জ্বরের ঘরে বসে যত্ন
- ভাইরাস জ্বর প্রতিরোধের উপায়
- লেখকের মন্তব্যঃ ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার-কারণ,যত্ন ও প্রতিরোধ
ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার-কারণ,যত্ন ও প্রতিরোধ
ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার-কারণ,যত্ন ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জানা জরুরি। ভাইরাস জ্বর একটি সাধারন জ্বর যা ঋতু পরিবর্তনের সময় দেখা দেয়। অথচ অনেক সময় এটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় যা বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা সৃষ্টি হয়। প্রতি বছরের যে কোন সময়ে হতে পারে তবে মৌসুম পরিবর্তনের সময় বিশেষ করে বর্ষাকালে এবং শীতকালে এই জ্বরের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
ভাইরাস সংক্রমণ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয় এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া মাত্র। নিজে থেকেই সেরে যায়, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক বেশি জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং এতে জীবনহানির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
তাই আমাদের ভাইরাস জ্বর সম্পর্কে জানতে হবে এবং সচেতন হতে হবে। সচেতনতা এবং সঠিক যত্নই হলো ভাইরাস জ্বর থেকে মুক্তির মূল উপায়। উচ্চ তাপমাত্রা হলে, তীব্র শ্বাসকষ্ট হলে, রক্তক্ষরণ হলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
শিশু এবং গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। হাত ধোয়ার মাধ্যমে সবসময় পরিষ্কার থাকা, মশার নিধনের মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ করা, বাসা-বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, মাস্ক ব্যবহার করা এবং টিকা গ্রহণ করাই হলো ভাইরাস জ্বরের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।
ভাইরাস জ্বরের কারণ
ভাইরাস জ্বরের কারণগুলো জেনে নিন। ভাইরাস সাধারণত সংক্রমিত ব্যক্তির হাচি, কাশি, স্পর্শের মাধ্যমে অথবা খাবার পানি বা মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাস জ্বর মূলত ভাইরাস নামক অণুজীবের দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা শরীরের কোষে প্রবেশ করে এবং সেখানে বংশবিস্তার লাভ করে। ভাইরাস জ্বরের প্রধান কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে-
- ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসঃ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস মৌসুমী ফ্লু সৃষ্টি করে।
- ডেঙ্গু ভাইরাস মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং উচ্চ জ্বরের পাশাপাশি রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে।
- চিকুনগুনিয়া ভাইরাসঃ চিকুনগুনিয়া ভাইরাস মশা বাহিত রোগ। এ জাতীয় রোগ হলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জয়েন পেইন সৃষ্টি করে থাকে।
- অ্যাডেনো ভাইরাসঃ অ্যাডেনো ভাইরাস শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায়।
- এন্টারো ভাইরাসঃ এন্টারো ভাইরাস পেটের সমস্যা এবং ফুসকুড়ি তৈরি করতে পারে।
- করোনা ভাইরাস-১৯ঃ করোনা ভাইরাস-১৯ বা কোভিড-১৯ বর্তমান সময় পর্যন্ত নানা জটিলতা ঘটাতে সক্ষমতা রাখে।
ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ
ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ গুলো খেয়াল করে রোগীকে যথাযথ ভাবে যত্ন নেয়ার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে। অনেক সময় সাধারণ জ্বরের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে ঘরোয়া ভাবে যত্ন নিলেই এই ভাইরাস জ্বর সেরে যায়। আবার ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে বা গর্ভবতী ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে ভাইরাস জ্বরের লক্ষণগুলো অতিমাত্রায় দেখা দিলে দেরি না করে অতি দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ গুলো হলো-
- উচ্চ তাপমাত্রার জ্বরঃ হঠাৎ ১০৩ ডিগ্রি থেকে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রার জ্বর আসে।
- মাথা ব্যথা ও শরীর ব্যথাঃ সারা শরীরে ব্যথা মাথা চোখ পিঠ এবং জয়েন্টে ব্যথা হয়।
- মাথা ঘোরা এবং শারীরিক দুর্বলতাঃ মাথা ঘোরা এবং শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয় ও রক্তচাপ কমে যায়।
- দুর্বলতা ও ক্লান্তিঃ অনেক সময় জ্বর কমলেও দীর্ঘ সময় শরীর দুর্বল থাকে।
- গলা ব্যথা ও কাশিঃ শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস উপসর্গ বেশি বেশি দেখা যায়
- বমি ও ডায়রিয়াঃ কিছু ভাইরাসের আক্রমণে হজমতন্ত্র আক্রান্ত হয়।
- চামড়ায় ফুসকুড়িঃ ডেঙ্গু বাহামের মত কিছু ভাইরাসে চামড়ায় ফুসকুড়ি হতে দেখা যায়।
- চোখ লাল হওয়াঃ ভাইরাস জনিত কনজাংটিভাইটিস এর কারণে চোখ লাল হতে পারে।
ভাইরাস জ্বর নির্ণয়ের উপায়
ভাইরাস জ্বর নির্ণয়ের উপায় নিয়ে এবার আলোচনা করছি। ভাইরাস জ্বরের সঠিক কারণ ও ধরণ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। ডাক্তারেরা সাধারণত নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলো করার কথা বলে থাকেন,যথা-
- শারীরিক পরীক্ষাঃ শারীরিক পরীক্ষা বলতে রোগীর দেহে রোগ লক্ষণ বা উপসর্গ দেখে প্রাথমিক ধারণা নেওয়া।
- রক্ত পরীক্ষাঃ রক্ত পরীক্ষা করার মাধ্যমে সি বি সি টেস্ট, ম্যালেরিয়া টেস্ট, চিকুনগুনিয়া ইত্যাদি চেক করা হয়।
- সেরোলোজিক্যাল টেস্টঃ সেরোলোজিক্যাল টেস্ট করা হয় ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে।
- পিসিআর টেস্টঃ পিসিআর টেস্ট করা হয় কোভিড-১৯ বা অন্যান্য ভাইরাসের সনাক্তকরণে।
ভাইরাস জ্বরের চিকিৎসা ও প্রতিকার
ভাইরাস জ্বরের চিকিৎসা ও প্রতিকার গ্রহণ করা প্রয়োজন। ভাইরাস জ্বরের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কার্যকর নয় কারণ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। তাই ভাইরাস জ্বরের চিকিৎসা মূলত উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার উপর নির্ভর করে। রোগীকে ঘরে বসে যত্ন নিন,পর্যাপ্ত পানি পান করান, বিশ্রাম গ্রহণ করতে দিন,প্যারাসিটামল ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী), সুষম খাবার গ্রহণ নিশ্চিত করুন।
ভাইরাস জ্বরের ঘরে বসে যত্নের উপায়
ভাইরাস জ্বরের ঘরে বসে যত্নের উপায় নিয়ে বলবো এবার। এই মুহূর্তে একটা নতুন ধরনের ভাইরাস জ্বর ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। এখন লক্ষণ গুলো আরো ভয়াবহ এবং অনেকে এটা আক্রান্ত হচ্ছে বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের বেশি হচ্ছে। তাই প্রথমে আপনাদের সচেতন হতে হবে এবং আপনাদের নিজেদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে তবেই বাচ্চাদের যত্ন নিতে পারবেন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম,সুষম খাদ্য গ্রহণ,পর্যাপ্ত পানীয় পান করা, হালকা পোশাক পরা ইত্যাদি পদক্ষেপ নিতে পারেন। নিচে এগুলো নিয়ে লেখা হলো-
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণঃ পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার সুযোগ দিন।
- পর্যাপ্ত পানীয় গ্রহণঃ পর্যাপ্ত পানি ও তরল পানীয় গ্রহণ করুন। জ্বর ও ঘামের কারণে শরীর পানি শুন্য হয়ে যায়।
- সুষম খাদ্য গ্রহণঃ বেশি বেশি সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। ভিটামিন, মিনারেল এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান।
- হালকা পোশাক পরাঃ শরীর ঠান্ডা রাখতে হালকা পোশাক পরুন।
ভাইরাস জ্বর প্রতিরোধের উপায়
ভাইরাস জ্বর প্রতিরোধের উপায় জানুন এই আর্টিকেলে। ভাইরাস জ্বর প্রতিরোধের উপায় হল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেমন-
- হাত ধোয়াঃ আমাদের দৈনন্দিন খাবার গ্রহণের আগে এবং পরে টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া উচিত।
- মশা নিয়ন্ত্রণ করাঃ চিকুনগনিয়া, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধন এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
- সংস্পর্শ এড়িয়ে চলাঃ সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
- মাস্ক ব্যবহার করাঃ শ্বাসনালির সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করুন।
- টিকা গ্রহণ করাঃ ইনফ্লুয়েঞ্জা বা অন্যান্য ভাইরাসের জন্য (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) টিকা গ্রহণ করতে হবে।
লেখকের মন্তব্যঃ ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার-কারণ,যত্ন ও প্রতিরোধ
ভাইরাস জ্বর একটি সাধারন স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও এটিকে কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ এটি মারাত্মক জটিলতার কারণ হতে পারে। সময় মত চিকিৎসা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং সচেতনতা গ্রহণ করাই হলো ভাইরাস জ্বর থেকে সুস্থ হওয়ার প্রধান উপায়।
এর পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সংক্রমণের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যায়। আপনার নিজের দায়িত্ব আর সচেতনতা হলো সেই দায়িত্ব পালনের প্রথম পদক্ষেপ। ভাইরাস জ্বরের কারণ, লক্ষণ, ঘরে বসে যত্ন এবং প্রতিরোধের উপায় জানুন। সুস্থ থাকতে সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতা জরুরী তাই সচেতন হোন এবং জীবন বাঁচান।
hiramonsdream er নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url