ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায়
ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান? ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগ যা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যাওয়ার ফলে সৃষ্টি হয়। এটি মূলত ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাব অথবা এর সঠিক কার্যকারিতা না থাকার কারণে হয়ে থাকে।
আধুনিক যুগে জীবনযাত্রা পরিবর্তন অনিয়ম ব্যায়ামের অভাব ইত্যাদির কারণে ডায়াবেটিসের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বহু দেশে এটি এখন অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এই আর্টিকেলে ডায়াবেটিসে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
পেজ সুচিপত্রঃ ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায়
- ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায়
- ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ
- ডায়াবেটিসের লক্ষণ
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করণীয়
- প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
- লেখকের মন্তব্যঃ ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায়
ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ
ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ সাধারণত তিনটি। যথা-
- টাইপ-১ ডায়াবেটিসঃ ইনসুলিন তৈরি হয় না সাধারণত ছোট বয়সে শুরু হয়। ইনসুলিন ইনজেকশন নেয়ার প্রয়োজন পড়ে।
- টাইপ-২ ডায়াবেটিসঃ শরীর ইনসুলিন তৈরি করলেও তা ঠিকভাবে কাজ করে না। এটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিসঃ গর্ভাবস্থায় সাময়িক ডায়াবেটিস হয় তবে ভবিষ্যতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে।
ডায়াবেটিস কোন সংক্রামক রোগ নয়। একবার ডায়াবেটিস হলে তা একেবারে সেরে যায় না তবে চিকিৎসা সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চললে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও জীবন নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাত্রা ছাড়া কোন ভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যে কেউ যেকোন বয়সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে তবে নিম্নলিখিত কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়,যেমন-যাদের মা বাবা এবং খুব নিকট আত্মীয় র ডায়াবেটিস আছে তাদের মধ্যে এই অভ্যাস আশঙ্কা বেশি থাকে।
অতিরিক্ত শারীরিক ওজন থাকলে এই রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করলে ডায়াবেটিস রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ডায়াবেটিস একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। সচেতনতা খাদ্যাভ্যাস নিয়মিত ওষুধ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে একজন ডায়াবেটিস রোগী ও স্বাভাবিক এবং কর্মক্ষম জীবন যাপন করতে পারেন। সমাজের সকল স্তরের মানুষের উচিত ডায়াবেটিস বিষয়ে সচেতন হওয়া। রোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং নিজেদের জীবন ধারায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনা।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ
ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে-
- অতিরিক্ত পিপাসা লাগা
- ঘন ঘন প্রস্রাব
- অস্বাভাবিক ক্ষুধা
- শরীরের ওজন কমে যাওয়া
- দুর্বলতা এবং ক্লান্তি
- চোখে ঝাপসা দেখা
- ক্ষত ধীরে ভালো হওয়া
- ত্বকের সংক্রমণ বা চুলকানি
এই লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ দেওয়া উচিত।
প্রাকৃতিক উপায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পরিপূরক হিসেবে যে সকল জিনিস খাওয়া যায়,যেমন- করলা ইনসুলিন এর কার্যকারিতা বাড়ায়। মেথি শর্করার শোষণ কমায়। জামের বীজের চূর্ণ ব্লাড সুগার কমাতে সহায়ক। আমলকি ইনসুলিন উৎপাদনে সহায়তা করে।
করলার রস, দারুচিনি, আদা, তুলসী পাতা, এলোভেরা জেল, নিমপাতা, হরিতকী, বেলপাতা, তরমুজের বিচি, চর্বিযুক্ত মাছ যেমন-পাঙ্গাস বা নদীর মাছ, গোলমরিচ ও হলুদের মিশ্রণ ইত্যাদি ডায়াবেটিসের জন্য ভালো কাজে দেয়। তুলসী পাতা, মেথি এবং আদার মিশ্রনের তৈরি বিশেষ চা তৈরি করে খেলে ডায়াবেটিসের মাত্রা কমে।
ইনসুলিন প্ল্যান্ট বা পনির ফুলিয়াস নামক উদ্ভিদটি টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব উপকারী। নয়ন তারা বা ভিনকা রোজা অ্যালকালয়েড উপাদান থাকে এর পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খেলে ডায়াবেটিসের উপকার পাওয়া যায়। গাইনূরা প্রোকাম্বেস বা লঙ্গিভিটি স্পাইনেজ ডায়াবেটিস গাছ নামে পরিচিত। এগুলো খেলে ডায়াবেটিস ভালো হয়। এছাড়াও ডুমুর এবং সজনে পাতা নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
খাদ্য তালিকা ও জীবন যাপন পরিবর্তনের কৌশল এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়মিত পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব সচেতনতা ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করণীয়
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করণীয় কাজ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রথম কাজ নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ করা।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করা। ডায়াবেটিস মনিটর দিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত দেখে রাখা উচিত।
- সুষম পরিকল্পিত খাদ্য গ্রহণ
- খাবারের পরিবর্তনে নেই রক্তের গ্লুকোজের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
- পরিমিত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ।
- লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার বেছে নেওয়া।
- চিনিও মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করা।
- আঁশ যুক্ত শাকসবজি ও দানা-শস্য এবং ফলমূল গ্রহণ করা।
- দিনে ৫-৬ বার অল্প অল্প করে খাবার খাওয়া ভালো।
যে খাবারগুলোতে প্রচুর আশ আছে সে খাবারগুলো বেশি করে খেলে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ে না তাই সেগুলো খাবার বেশি করে খাওয়া যাবে। সব রকমের শাক সবজি যেমন- চিচিঙ্গা, ধুন্দল, পেঁপে, পটল,শিম, লাউ, শসা, খিরা, করলা, উচ্ছে কাকরোল ফুলকপি বাঁধাকপি ইত্যাদি। ফলের মধ্যে জামরুল আমলকি লেবু জাম্বুরা ইত্যাদি ফল বেশি খাওয়া যাবে।
হিসেব করে খেতে হবে যেসব খাবারঃ কিছু খাবার আছে খাওয়ার পর খুব দ্রুত রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ না বাড়লেও সে খাবারগুলো পরিমানে বেশি খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় তাই সে খাবারগুলো হিসাব করে খেতে হবে। যেমন- ভাত রুটি চিড়া মুড়ি,খৈ, বিস্কিট, আলু, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া দুধ ছানা পনির মাছ মাংস ডিম ডাল বাদাম মিষ্টি ফল যেমন কলা পাকা আম পাকা পেঁপে ইত্যাদি কম খেতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সাদা চাল এবং লাল চালের ভাত এবং ভুসি সহ আটার রুটি বেশি উপকারী। এগুলো রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দ্রুত বাড়ায় না।
যে সব খাদ্য পরিহার করতে হবেঃ কিছু কিছু খাবার আছে যা খাওয়ার পর খুব দ্রুত রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় সে খাবারগুলো পরিহার করতে হবে। যেমন- চিনি, গুড়, মিশ্রি, রস, শরবত, সফট ড্রিংকস ,জুস ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
শরীরের ওজন বেশি থাকলে তা কমিয়ে স্বাভাবিক ওজনে আনতে হবে। আবার শরীরে ওজন কম থাকলে তা বাড়িয়ে স্বাভাবিক ওজনের আনতে হবে। সব সময় শরীরের ওজন স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে হবে।
নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে খাবার খেতে হবে। নিজের ইচ্ছা মত কোন বেলার খাবার বাদ দেওয়া যাবে না এক বেলা বেশি খাওয়া বা অন্য বেলায় কম খাবার খাওয়া অথবা একদিন কম একদিন বেশি খাবার খাওয়া যাবে না।
এক কথায় বলা যায় যে নিয়ম তান্ত্রিকভাবে খাদ্য গ্রহণে সহজে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
শারীরিক পরিশ্রম ব্যায়ামঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিশ্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা এবং নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
ওষুধ গ্রহণঃ সকল ডায়াবেটিস রোগীকে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমশৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। তবে কোন কোন ডায়াবেটিস রোগীকে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম ও শৃঙ্খলা মেনে চলার পাশাপাশি খাবার ওষুধ অথবা ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিতে হয়। যে রোগীকে চিকিৎসার জন্য যে ওষুধ বা খাবার বড়ি অথবা ইনসুলিন ইনজেকশন যাই দেওয়া হোক না কেন তাকে তার জন্য নির্ধারিত ডোজ এবং এর সাথে খাদ্য গ্রহণ বা শারীরিক পরিশ্রমের সঠিক নিয়ম খুবই সচেতন ভাবে মেনে চলতে হবে। তা না হলে ওষুধ নিয়ন্ত্রণে পরিবর্তে জীবনের কারণ হতে পারে।
রোগ সম্পর্কে শিক্ষাঃ ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ তাই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে রোগীকে এবং রোগের নিকট আত্মীয়দেরও অবশ্যই এবং সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে কারণ ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।
শৃঙ্খলা মেনে চলাঃ ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ন্ত্রক জীবন যাপন অর্থাৎ জীবন যাপনের শৃঙ্খলা মেনে চলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
- নিয়মিত পরিমাণমতো সুষমা খাদ্য গ্রহণ এবং এই সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ মেনে চলা।
- নিয়মিত প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করা।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং পায়ের নিয়মিত বিশেষ যত্ন নেওয়া।
- নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করা এবং রিপোর্ট সংরক্ষণ করা।
- ধূমপান ও মদপানের মতো বদভ্যাস অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
- প্রতিদিন জীবনযাত্রায় যথাসম্ভব নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলা।
- ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করা।
- শারীরিক যে কোন জরুরি অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী খাবার পড়ি অথবা ইনসুলিন ইনজেকশন গ্রহণ করা ( এটি অতিমাত্রায় ডায়াবেটিস হলে)।
- ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা বন্ধ না করা।
hiramonsdream er নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url