অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায় জানতে চান? তাহলে আর্টিকেলটি পড়ুন। চুল মানুষের সৌন্দর্যের প্রতীক। এই আর্টিকেলে আমরা অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ প্রতিকার ঘরোয়া সমাধান চিকিৎসা ও প্রতিরোধে বিস্তারিত আলোচনা করব।
অতিরিক্ত চুল পড়া আজকের দিনে একটি সাধারণ সমস্যা। সঠিক যত্ন ঘরোয়া প্রতিকার স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে সহজে চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব এসব নিয়ে জানুন বিস্তারিত।
অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধের কার্যকরী ঘরোয়া সমাধান
চুল মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম একটি প্রতীক। সুস্থ ঘন ও সুন্দর চুল শুধু বাহ্যিক রুপকে নয় বরং আত্মবিশ্বাসকেও বৃদ্ধি করে। অথচ বর্তমানে অতিরিক্ত চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে। বয়স পরিবেশ দূষণ ও নিয়মিত জীবন যাপন মানসিক চাপ হর মনের অসামঞ্জস্য সঠিক পুষ্টির অভাব এবং বিভিন্ন রোগের কারণে অল্প বয়স থেকেই অনেকের মাথার চুল পড়ে পাতলা হয়ে যায়। সঠিক যত্ন স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব হবে।
তেল ব্যবহার করে চুল পড়া রোধ করা
তেল দ্বারা যত্ন নেয়া যায়। প্রাচীনকাল থেকেই চুলের যত্নের জন্য প্রাকৃতিক তেল ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন রকম তেল চুলের যত্নে ব্যবহার করা হয়ে থাকে নিচে এগুলো সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো
নারকেল তেলঃ মাথার ত্বকে ময়েশ্চারাইজড করে খুশকি রোধ করে।
আমলা তেলঃ ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেণ্ট সমৃদ্ধ যা চুল পড়া কমায়।
অলিভ অয়েলঃ মাথার কাল্পের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে যা চুলকে মজবুত করে তোলে।
পেয়াজের রস মিশ্রিত তেলঃপেয়াজের রস মিশ্রিত তেল সালফার সমৃদ্ধ হওয়ায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করে চুল পড়া রোধ
ডিম ও দইয়ের মাস্ক প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।
লাগানো হলে চুলের গোড়া শক্ত করে।
অ্যালোভেরা জেল মাথার ত্বক ঠান্ডা রাখে এবং খুশকি দূর করে।
ভেষজ উপাদান ব্যবহার করে চুল পড়া রোধ করা
হিবিস্কাস ফুল ও পাতা চুল ঘন করে
নিমপাতা খুশকি ও ইনফেকশন প্রতিরোধ করে এবং চুল ঘন করে চুল পড়া রোধ করে।
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন
চুলের জন্য উপকারী খাবার
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: ডিম মাছ মুরগি ডাল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার:পালং শাক,বিটরুট,কলিজা ইত্যাদি।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারঃ কমলা লেবু পেয়ারা
ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ খাবারঃসামুদ্রিক মাছ,আখরুট
জিংক ও বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ চিনা বাদাম,কাজু বাদাম,দুধ ইত্যাদি।
ক্ষতিকর খাবার এড়িয়ে চলা অতিরিক্ত ভাজাপোড়া জাঙ্ক ফুড অতিরিক্ত কফি বা সফট ড্রিংক ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন করা
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থাৎ সাত আট ঘন্টা ঘুমানো
নিয়মিত ব্যায়াম করা এতে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়
মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম করা, স্কাল্প পরিষ্কার রাখা, অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু বা চুলের কালার ব্যবহার এড়িয়ে চলা।
চিকিৎসা ও আধুনিক সমাধান
ডাক্তারি চিকিৎসা মতে মিনোক্সিডিল লোশন ব্যবহার করা,পুরুষদের জন্য ফিন্যাস্টেরাইড ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে এবং নারীদের জন্য হরমোন থেরাপি দেয়া যেতে পারে।
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে পিআরপি থেরাপি বা প্লেটেলেট রিচ থেরাপি গ্রহণ করা হয়,হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যায় এবং লেজার থেরাপি দেয়া যায়।
চুল পড়া প্রতিরোধের কৌশল
ছোটবেলা থেকে চুলের যত্ন নেওয়া। চুলে নিয়মিত তেল ব্যবহার করা। সূর্যের আলোতে বের হলে স্কার্প বা টুপি ব্যবহার করা। সুষম খাদ্য ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা। মৌসুমী চুল পড়াকে স্বাভাবিক ধরা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
অতিরিক্ত চুল পড়া এখন কমন সমস্যা। আজকের যুগে একটি সাধারন সমস্যা হলেও এটি অচিকিৎসাযোগ্য নয় অর্থাৎ নিরাময় যোগ্য সমস্যা। সঠিক খাদ্যাভ্যাস জীবন যাপন মানসিক প্রশান্তি ঘরোয়া প্রতিকার এবং প্রয়োজনে আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে চুল পড়া অনেক অংশে রোধ করা যায় এবং নতুন চুল গজানো সম্ভব।
নিয়মিত ভাবে চুলের যত্ন নিলে এবং ধৈর্য ধারণ করে সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করার মাধ্যমে সুস্থ ও সুন্দর ঘন চুলের অধিকারী আপনিও হতে পারেন। এটাই হল সুস্থ ও ঘন চুলের মূল রহস্য।
অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায়-
- সঠিক ডায়েট মেনে খাবার খেতে হবে। ডিম সিদ্ধ, ডাল ,বাদাম,মিষ্টি আলু,ওটস ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।
- নিয়মিত চুল পরিষ্কার করতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার ভালো করে চুল ধুতে হবে।
- চুল পড়া প্রতিরোধে খাবার ম্যেনুতে জিংক, আয়রন এবং ভিটামিন ডি পূর্ণ খাবার রাখতে হবে।
- নিজেকে যথাসম্ভব চিন্তামুক্ত রাখতে হবে।
- ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিনদিন তেল মাখুন।
- সালফেটযুক্ত শ্যাম্পু এড়িয়ে চলুন।
- সপ্তাহে একবার প্যাক মাখুন।
- ভেজা চুল চিরুনি দিয়ে আঁচড়াবেন না।
- মাসে দুই বার ডিপ কন্ডিশনিং করুন।
- নিয়মিত চিরুনি পরিষ্কার করুন।
- হেয়ার ড্রায়ার এবং স্ট্রেইটনার এড়িয়ে চলুন।
চুল পড়া কেন হয়
প্রতিদিন ৮০থেকে ১০০ টি চুল পড়া স্বাভাবিক হলেও এর বেশি হলে সেটি সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু প্রতিদিন যদি বেশি পরিমাণে চুল পড়ে যায় তবে তা যেমন মানসিক চিন্তার বিষয় অন্যদিকে শারীরিক সমস্যা পুষ্টির ঘাটতিরও বহিঃপ্রকাশ। আমরা জানবো অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ,অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায়, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা পরিবর্তন আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রতিরোধের উপায় অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় ইত্যাদি।
অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ একাধিক। মূল কারণগুলো হলো-
- জেনেটিক কারণ: অনেক সময় বংশগতভাবে চুল পড়ার প্রভাব দেখা দেয় অর্থাৎ বংশের কারও বা পিতা-মাতার চুল পড়ে মাথায় টাক হওয়ার প্রব্লেম থাকলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। বংশগত বা জেনেটিক কারণে অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা থাকলে নারী এবং পুরুষ উভয়ের টাক পরার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- হরমোনের অসামঞ্জস্যঃ মেয়েদের ক্ষেত্রে থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস প্রবলেম থাকলে, গর্ভধারণ এবং সন্তান জন্মের পর হরমোনের পরিবর্তন হলে ইত্যাদি কারণে চুল পড়া বেড়ে যায়।
- মানসিক চাপ ও ডিপ্রেশনঃ অতিরিক্ত টেনশন মানসিক অবসাদ এবং ঘুমের ঘাটতি অতিরিক্ত চুল পড়ার অন্যতম আরেকটি বড় কারণ।
- পুষ্টির ঘাটতিঃ চুলের মুল অংশ কেরোটিন ও প্রোটিন দিয়ে গঠিত। প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি ১২ এবং ওমেগা ৩ এর অভাব হলে চুল দূর্বল হয়ে ঝরে পড়ে যায়।
- জীবনযাত্রার অনিয়মঃ ধূমপান ও মদ্যপান করলে, অনিয়মিত ঘুম হলে, জাঙ্ক ফুড বেশি পরিমাণে খেলে এবং এগুলোর প্রভাবে জীবনযাত্রার অনিয়ম হলে অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়।
- পরিবেশগত কারণঃ ধুলাবালি দূষণ অতিরিক্ত রোধ এবং কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু বা হেয়ার কালার অতিরিক্ত ব্যবহারে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
hiramonsdream er নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url