কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস জানুন আমাদের আজকের আর্টিকেলে। আজ আমরা কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস এবং মাসয়ালা,কোরবানি করার নিয়ম ও দোয়া এবং হাদিসে তাকবিরে তাশরিক ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। কোরবানি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো না জানলে কোরবানির ফজিলত থেকে বঞ্চিত হতে হবে।

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
কেউ যদি আল্লাহর হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে শুধু গোস্ত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে তাহলে তার কোরবানি সহীহ হবে না এবং তাকে অংশীদার বানালে শরিকদের কারো কোরবানি হবে না। তাই আমাদের এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। চলুন  তাহলে আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিই।  

পেজ সূচিপত্রঃকোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস 

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস,উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিতঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃকোরবানির দিনের আমল সমূহের মধ্যে পশু কোরবানী করার চেয়ে কোন আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট অধিক প্রিয় না। নিশ্চয়ই কিয়ামত দিবসে কোরবানির পশুকে তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত করা হবে। কোরবানির প্রাণীর রক্ত মাটিতে পড়ার আগে তা আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যায়। অতএব তোমরা আনন্দচিত্তে কোরবানি করো।-তিরমিযিঃ১৪৯৩ 

কোরবানির মাসআলা

 কোরবানির মাসআলা সম্পর্কে জেনে নিই। প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী যে ১০ জিলহজ্ব ফজর হতে ১২ ই জিলহজ্জ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব হবে। নেশা হলো স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরে এবং রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বাহান্ন তোলা। টাকা পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নেসাব হলো সাড়ে ৫২ তোলার রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রুপা কিংবা টাকা পয়সা এগুলো কোন একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমান না হয় কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলে তার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব    হবে।-রদ্দুল মুহতারঃ৩১৮ 

মুসাফিরের উপর কোরবানী করা ওয়াজিব নয়। -শামি৩১১-বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৩ 

কোন ব্যক্তি যদি  জিলহজ্বের ১০ এবং ১১ তারিখে সফরে থাকে বা গরিব ছিল কিন্তু ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে বাড়ি ফিরেছে বা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছে অথবা কোথাও ১৫ দিন পর্যন্ত অবস্থান করার নিয়ত করেছে এবং তার কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে তার উপর কোরবানি ওয়াজিব হবে।- বাদায়েউস সানায়ে৫/৬৩ 

কেউ যদি কোরবানির দিনগুলোতে ওয়াজিব কোরবানি দিতে না পারে তাহলে কোরবানির পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সাদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করা থাকে তাহলে ওই পশু জীবিত থাকা করে দিবে।-বাদায়েউস সানায়ে২০৪ঃকাযিখান ৩/৩৪৫

কোরবানির পশু নিজে জবাই করা উত্তম, তবে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে এক্ষেত্রে কোরবানি দাতা পুরুষ হলে জবাই স্থলে উপস্থিত থাকা ভালো।-মুসনাদে আহমাদঃ২২৬৫৭,বাদায়েউস সানায়েঃ৪/২২২-২২৩,আলমগিরিঃ৫/৩০০ 

কোরবানি করার সময় যদি শুধু দিলে নিয়ত করে মুখে শুধু বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে জবাই করে তাহলে কোরবানি শুদ্ধ হয়ে যাবে।-বুখারীঃ৫৫৬৫,মুসলিমঃ১৯৬৫-১৯৬৭ 

কোরবানি শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয়। ছেলে মেয়ে বা অন্য কারো পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয় না। তবে অন্যের পক্ষ থেকে দিলে সওয়াবের অধিকারী হবে।-বাদায়েউস সানায়েঃ৫/৬৫ 

গরু,মহিষ,ছাগল,ভেড়া এবং দুম্বা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশুর যেমন হরিণ বন্য গরু ইত্যাদি দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়।-কাযিখানঃ৩/৩৪৮,বাদায়েউস সানায়েঃ৪/২০৫

উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। আর ছাগল,ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে এক বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি এক বছরের কিছু কমও হয় কিন্তু দেখতে এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে দেখতে এক বছরের মত মনে হয় তাহলে তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ছয় মাস বয়সের হতে হবে,তবে এক্ষেত্রে আলেমদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। উল্লেখ্য ছাগলের বয়স এক বছরের কম হলে কোন অবস্থাতেই তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না।-বাদায়েউস সানায়েঃ৪/২০৫, কাযিখানঃ৩/৩৪৮

যেসব পশু কোরবানি করা জায়েজ সেগুলো নর-মাদী প্রত্যেকটি দ্বারা কোরবানি করা যায়।-কাযিখানঃ৩/৩৪৮,বাদায়েউস সানায়েঃ৪/২০৫  

একটি ছাগল ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা একজন কোরবানি দিতে পারবে। আর উট,গরু,মহিষে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারবে।-সহীহ মুসলিমঃ১৩১৮,বাদায়েউসসানায়েঃ৪/২০৭,কাযিখানঃ৩/৩৪৯,মুয়াত্তা  মালেকঃ১/৩১৯

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
সাত জন মিলে কোরবানি করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবেনা। যেমন কারো আধা ভাগ আবার কারো দেড় ভাগ এমন হলে কোন শরীকের কোরবানি সহীহ  হবে না।-বাদায়েউস সানায়েঃ৪/২০৭ 

হযরত আবু কাতাদা রাঃ সূত্রে বর্ণিত,রাসূল সাঃ এরশাদ করেন, জিলহজ্বের  নয় তারিখের রোজা এক বছর আগের ও পরের গুনাহকে মাফ করে দিবে বলে আমি আশা করি।-মুসলিমঃ১১৬২ 

কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম।-আবু দাউদঃ২৭৯৬ 

এমন শুকনো, দুর্বল পশু যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না,তার দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়।-তিরমিজিঃ১/২৭৫ 

মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে কোরবানি করা জায়েজ এবং সে গোশত নিজেও খেতে পারবে অন্য কেউ দান করতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কোরবানির ওছিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোস্ত নিজেরা খেতে পারবে না শুধুমাত্র গরিব মিসকিনদের মাঝে সদকা করতে হবে।-সুনানে আহমদঃ১/১০৭,আবু দাউদঃ২৭৯০

কোরবানি করার নিয়ম এবং কোরবানি করার দোয়া 

কোরবানি করার নিয়ম এবং কোরবানি করার দোয়া সম্পর্কে এবার উল্লেখ করবো। কোরবানি করার নিয়ম হলো কোরবানির পশুকে কেবলা মুখ করে শোয়াতে হবে এবং এই দোয়াটি পড়তে হবেঃ ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও অমা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রব্বিল আলামিন। লা শারীকালাহু ওয়া বি জালিকা উমিরতু ওয়া আনা আওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার (আবু দাউদ শরীফঃ২৭৯৫) এবং তারপর কুরবানী করতে হবে।

এছাড়াও আরেকটি দোয়া পড়া যায়,যেমনঃ

  • ১। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার। অর্থঃ "আমি আল্লাহর নামে কোরবানি করছি আর আল্লাহ মহান।" 
  • ২। আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন্নি ওয়া মিন আহলে বাইতি। অর্থঃ "হে আল্লাহ,আমার ও আমার পরিবারের পক্ষ থেকে এই কুরবানী কবুল করুন।"
কোরবানির সময় করণীয়ঃ
  • কোরবানির স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ধুয়ে ফেলুন।
  • কোরবানির পশু থেকে ভালো করে গোসল করিয়ে দিন।
  • মাংস কাটার জন্য পরিষ্কার স্থান সরঞ্জাম ব্যবহার করুন।
  • চামড়া ছাড়ানোর পর পরিষ্কার স্থানে রাখুন।
  • মাংস কাটার পর বর্জ্যগুলো সিটি কর্পোরেশন অথবা মাটিতে গভীর গর্ত করে চাপা দিয়ে দিন। 

হাদিসে তাকবীরে তাশরিক

হাদিসে তাকবীরে তাশরীক সম্পর্কে এবার জেনে নিই। হযরত যাবের রাঃ সূত্রে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসুল সাঃ আরাফার দিন ফজরের নামাজের পর সাহাবায়ে কেরামের দিকে মুখ ফেরাতেন এবং বলতেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গাতে বসো। এরপর তিনি বলতেনঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ" এভাবে তিনি আরাফার দিন ফজরের নামাজ থেকে শুরু করে আইয়ামে তাশরিকের শেষ দিন (অর্থাৎ১৩তারিখ পর্যন্ত) আসরের নামাজ পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন।-দারে কুতনীঃ২/৩৮(১৭২১),সুতরাং আমরাও এ হাদিসে বর্ণিত তাকবিরে তাশরিক পাঠ করবো।

হযরত ইবনে ওমর রাঃ তাশরিকের দিনে মিনাতে অবস্থানকালীন সময়ে তাকবীরে তাশরিকে পাঠ করতেন।-সহীহ বুখারী শরীফঃ১/১৩২ 

লেখকের শেষ মন্তব্যঃ কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস গুলো জেনে আমরা আমলের নিয়তে সেই অনুযায়ী নিয়ম মেনে চলবো। তাহলে আমরা বেশি বেশি সওয়াব হাসিল করতে পারবো এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে সক্ষম হবো,ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস গুলো জানার এবং মানার তৌফিক দান করুন,আমীন।
আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে শেয়ার করুন। অন্যদের উপকারে আসলে আপনি নিজেও অশেষ সওয়াবের ভাগীদার হবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

hiramonsdream er নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url