সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের ২০টি দায়িত্ব ও কর্তব্য-সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের  ২০টি দায়িত্ব ও কর্তব্য-সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সকলের জানা প্রয়োজন। আজকের এই আর্টিকেলে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য,সুনাগরিকের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের ২০টি দায়িত্ব ও কর্তব্য

সুনাগরিকের ধারণা ব্যাপক এবং বহুমাত্রিক। এর আওতাধীন ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং  অর্থনৈতিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পালনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমরা এই আর্টিকেলে একজন সুনাগরিকের গুরুত্বপূর্ণ ২০টি দায়িত্ব ও কর্তব্য গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

পেজ সূচিপত্রঃ সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের ২০টি দায়িত্ব ও কর্তব্য-সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের ২০টি দায়িত্ব ও কর্তব্য

    একটি জাতির ভিত্তি ও রাষ্ট্রের উন্নতি এবং স্থিতিশীলতার মূল হল সুনাগরিক সমাজ। সুনাগরিক শুধুমাত্র একটি শব্দ নয় এটি একটি ধারণা যা ব্যক্তির অধিকারের পাশাপাশি সমাজের প্রতি তার দায়িত্ব এবং কর্তব্যবোধকে ধারণ করে। একটি দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ নাগরিক সমাজই একটি দেশকে প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে এবং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে।
    সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের ২০টি দায়িত্ব ও কর্তব্য গুলো নিচে সবিস্তারে বর্ণনা করা হলোঃ
  1. রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ও আইন মেনে চলাঃ একজন সুনাগরিকের প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রতি পরিপূর্ণভাবে  আনুগত্য পোষণ করা। এর মানে হলো দেশের সংবিধান,আইন এবং বিধি-বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং তা যথাযথভাবে মেনে চলা। শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা এবং অন্যানগরীদেরও আইন মানতে উৎসাহিত করা একজন নাগরিকের কর্তব্য।  
  2. ভোটাধিকার প্রয়োগ ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করাঃ ভোটাধিকার প্রয়োগ ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া অংশগ্রহণ করা একজন সুনাগরিকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধিকার ও কর্তব্য। যোগ্য ও সৎ প্রার্থী নির্বাচন করা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব এবং এটি একটি সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। 
  3. সরকারি কাজে সহযোগিতা ও সমালোচনা করাঃ একজন সুনাগরিকের কর্তব্য হলো সরকারি কাজে সহযোগিতা করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শ প্রদান করা। তবে এর পাশাপাশি সরকারের ভুল নীতি ও অন্যায়ের গঠনমূলক সমালোচনা করার একজন সুনাগরিকের অধিকার রয়েছে। তবে সরকারের ভুলগুলোর গঠনমূলক সমালোচনা করে জনকল্যাণমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করতে হবে। গঠনমূলক সমালোচনা করার সময় মনে রাখতে হবে তা যেন তথ্যভিত্তিক,শালীন এবং বিদ্বেষ মুক্তভাবে হয়। 
  4. সামাজিক সম্প্রীতি ও সহনশীলতা বজায় রাখাঃ সামাজিক সম্প্রীতি ও সহনশীলতা বজায় রাখা একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেকোনো প্রকার বিদ্বেষ সাম্প্রদায়িকতা ও বিভেদ সৃষ্টিকারী কার্যকলাপ থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং সামাজিক ঐক্য বজায় রাখতে ভূমিকা পালন করা অপরিহার্য। 
  5. অন্যের অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করাঃ অন্যের অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা একজন দায়িত্বশীল সুনাগরিকের কর্তব্য। 
  6. পরিবেশ রক্ষা ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ করাঃ পরিবেশ রক্ষা প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ করা বর্তমান প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। একজন সুনাগরিক পরিবেশ দূষণ রোধে সচেতন থাকবেন এবং বনভূমি ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবেন, পানি বিদ্যুৎ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার মিতব্যয়ী  হবেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও বাসযোগ্য নিরাপদ পৃথিবী রেখে যেতে সচেষ্ট হবেন।  
  7. শিক্ষা লাভ ও জ্ঞান অর্জন করাঃ শিক্ষালাভ ও জ্ঞান অর্জন করা সুনাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য। কারণ শিক্ষার আলোতে একজন সুনাগরিক তার অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং একটি উন্নত সমাজ গঠনে অবদান রাখতে পারে। এছাড়াও অন্যদের শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত করা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়তা করা সুনাগরিকের কর্তব্য। 
  8. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করাঃ একজন সুনাগরিকের কর্তব্য হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করা। একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব হলো দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পক্ষে দাঁড়ানো। 
  9. জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করাঃ একজন সুনাগরিক সবসময় জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করবেন এটা তার কর্তব্য। অসহায়দের সাহায্য করা,সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা,দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা একজন সুনাগরিকের কর্তব্য। একটি সহানুভূতিশীল সমাজ গঠনে প্রত্যেক সুনাগরিকের সক্রিয়        ভূমিকা পালন করা অপরিহার্য।  
  10. কর প্রদান অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখাঃ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অর্থের প্রয়োজন হয় তাই প্রতিটি নাগরিকের কর প্রদান করা উচিত। অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখা বা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করা এবং জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধিতে অবদান রাখা এবং নিয়মিত ও সঠিকভাবে কর প্রদান করা একজন সুনাগরিকের কর্তব্য। 
  11. আন্তর্জাতিকতাবোধ ও বিশ্ব শান্তি রক্ষা করাঃ আন্তর্জাতিকতাবোধ ও বিশ্ব শান্তি রক্ষা করা একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব। আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি মেনে চলা এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা একজন সুনাগরিকের কর্তব্য।  
  12. সততা ও নৈতিক মূল্যবোধঃ একজন সুনাগরিকের সততা ও নৈতিক মূল্যবোধ থাকা উচিত। ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের সততা বজায় রাখা ন্যায় নীতি অনুসরণ করা এবং দুর্নীতি মুক্ত জীবন যাপন করা সুনাগরিকের কর্তব্য। 
  13. সমালোচনা মূলক চিন্তাভাবনা ও যুক্তিবোধঃ একজন সুনাগরিকের সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা ও যুক্তিবোধ থাকা হবে। যেকোনো তথ্য বা ধারণাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে যুক্তি ও প্রমাণের ভিত্তিতে যাচাই করা  এবং নিজস্ব মতামত গঠন করার ক্ষমতা থাকতে হবে এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখা সুনাগরিকের কর্তব্য। 
  14. ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীলতাঃ সাহেবগঞ্জ নাগরিককে অবশ্যই তার দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণ করা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা এবং নিজের সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। 
  15. স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাঃ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য একটি সুস্থ সমাজের ভিত্তি তাই একজন সুনাগরিকের  নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এর পাশাপাশি পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রেও তাকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
  16. সময়ের মূল্য দেওয়া ও নিয়মানুবর্তিতাঃ আমাদের জীবনে সময় মহামূল্যবান। একজন সুনাগরিককে মনে রাখতে হবে যে জীবনে সময়ানুবর্তিতা সাফল্যের চাবিকাঠি তাই সময়ের মূল্য দিতে হবে এবং নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলতে হবে। সেই সাথে  অন্যের সময়ের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হওয়া সুনাগরিকের কর্তব্য। 
  17. আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারের প্রতি সচেতনতাঃ একজন সুনাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারের প্রতি সচেতনতা থাকতে হবে। তার নিজের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার রয়েছে এবং অপরকে এর প্রতি সচেতন করার দায়িত্ব রয়েছে। 
  18. তথ্য অধিকার ও দায়িত্বশীল ব্যবহারঃ তথ্য জানার অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকার তাই একজন সুনাগরিকের তথ্য জানার অধিকার রয়েছে । তাকে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে সঠিক তথ্য চেয়ে রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে জানতে হবে। কিন্তু ভুল বা বিকৃত তথ্য প্রচার বা অন্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা সুনাগরিকের কর্তব্য নয়। 
  19. মানবাধিকারের প্রতি সম্মানঃ মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং তা পালনে সাহায্য করা একজন সুনাগরিকের মৌলিক কর্তব্য।  মানবাধিকার লংঘনকারী যে কোন কাজের প্রতিবাদ করা এবং মানবাধিকার রক্ষায় সোচ্চার হওয়া একজন সুনাগরিকের জন্য অপরিহার্য। 
  20. আত্মনির্ভরশীলতা ও উদ্যোক্তা মনোভাবঃ একজন সুনাগরিকের আত্মনির্ভরশীলতা ও উদ্যোক্তা মনোভাব থাকা বাঞ্ছনীয়। একটি শক্তিশালী অর্থনীতি একটি উন্নত রাষ্ট্রের পূর্ব শর্ত তাই একজন সুনাগরিককে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে এবং নিজের জীবিকা নির্বাহের জন্য সৎপথে উপার্জন করতে হবে। কারণ উদ্যোক্তা মনোভাব পোষণ করা এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। 

 সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য

সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো - সামাজিক দায়িত্ব পালন করা, আইন মান্য করা, রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করা, সচেতন ও সজাগ হওয়া, সুশাসনে আগ্রহ প্রকাশ কর। রাষ্ট্রে সম্মানের সাথে বসবাস করা নাগরিকের অধিকার। অধিকারের সঙ্গে কর্তব্যের একটি নিবিড় যোগ রয়েছে। জীবনের কেবলই অধিকার ভোগ করব অথচ কারো প্রতি কোন দায়িত্ব পালন করব না এটা কখনো সম্ভব নয় তাই রাষ্ট্রের নিকট থেকে অধিকার ভোগের সঙ্গে সঙ্গে কিছু দায়িত্ব পালনের কথাও এসে যায়। পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্র সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। সুনাগরিকদের এই সমস্ত নীতিমালা তথা আইন কানুন মেনে চলতে হয়।

রাষ্ট্র নাগরিকদের স্বাধীনতা প্রদান করে বলেই তারা অপব্যবহার করা উচিত নয়। এতে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ও সামাজিক শান্তি বিনষ্ট হয়। মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, তা সমানভাবে সকলের। সুতরাং রাষ্ট্রের প্রতি যার যেটুকু কর্তব্য তাকে তা পালন করা দরকার। তাহলেই নিজেদের সুনাগরিক হিসেবে পরিচয় দেওয়া যাবে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের ২০টি দায়িত্ব ও কর্তব্য

সুনাগরিকের কর্তব্য দুই প্রকার যথাঃ আইনগত ও নৈতিক। সুশৃঙ্খলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আইনসভা বিভিন্ন ধরনের আইন প্রণয়ন করে থাকে। নাগরিকদের এসব আইন-কানুন মেনে চলতে হয়। তা না হলে রাষ্ট্র আইন অমান্যকারীকে শাস্তি দিতে পারে। এছাড়াও সুনাগরিকের নৈতিক কর্তব্য মেনে চলা উচিত যেমনঃ রাজপথে কোন আহত মানুষ পড়ে থাকলে তাকে ক্লিনিকে বা হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া সুনাগরিকের নৈতিক কর্তব্য।

এছাড়াও নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য গুলো নিচে পয়েন্ট আউট করা হলোঃ 

  • ট্রাফিক আইন মেনে চলা 
  • ভোটাধিকার প্রয়োগ করা 
  • পরিবেশ রক্ষা ও গাছ লাগানো 
  • সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করা
  • দেশের আইন ও নিয়ম কানুন মেনে চলা। 

সমাজ তথা রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও কাজ

সমাজ তথা রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও কাজ সম্পর্কে অবহিত করা জরুরী বলে মনে করছি। যারা নগরে বাস করে সাধারণভাবে তাদেরকে নাগরিক বলা হয়ে থাকে। ব্যাপক অর্থে বলা যায়,যারা একটি নির্দিষ্ট রাষ্ট্রে জন্ম সূত্রে বা রাষ্ট্রীয় অনুমোদন সূত্রে বসবাস করে এবং সেই রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে তাদেরকে নাগরিক বলা হয়। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের জীবন বিকাশের সকল প্রকার সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করে থাকে। মূলত এই উদ্দেশ্যেই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। এই প্রকৃতির অপর্যাপ্ত আলো বাতাসের মতো কিছু অধিকার না পেলে মানুষ আত্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়।

এজন্য রাষ্ট্র তার নাগরিকদের জন্য কতগুলো অধিকার সংরক্ষণ করে। এই অধিকার ভোগের সঙ্গে নাগরিকদের ও রাষ্ট্রের প্রতি কিছু দায়িত্ব আছে। নাগরিকদের নিষ্ঠার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করা উচিত। তা না হলে রাষ্ট্র তার অস্তিত্ব এবং নাগরিক অধিকার রক্ষা করতে পারে না। নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রীয় অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের দায়িত্ববোধ এই দুটি জিনিসের মেলবন্ধন ঘটলে তবেই কল্যাণমূলক বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়। 

রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকের অধিকার

রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকের অধিকার রয়েছে। রাষ্ট্র প্রথমত নাগরিকদের অস্তিত্ব রক্ষার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু যেহেতু অস্তিত্ব রক্ষায় মানবজীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য নয় সেহেতু রাষ্ট্রের আরেকটি দায়িত্ব এসে পড়ে নাগরিকরা যাতে মানুষ হিসেবে বিকশিত হতে পারে তার ব্যবস্থা এবং আগ্রহ সৃষ্টি করাও রাষ্ট্রের কাজ। এটাই তার দ্বিতীয় কিন্তু প্রধান কাজ। এই দুটি উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে যে রাষ্ট্র সে রাষ্ট্রের নাগরিকরাই যথার্থ অর্থে সুখী হতে পারে। 

নাগরিকরা ভালোভাবে খেয়ে-পরে এবং সুস্থ ভাবে নিরাপত্তার সাথে যাতে বসবাস করতে পারে তা রাষ্ট্রকে দেখতে হবে। এটা নাগরিকদের প্রথম মৌলিক অধিকার। না খেয়ে বিনা চিকিৎসায় যাতে কেউ মারা না যায় রাষ্ট্রকে তা দেখতে হবে। সুবিধা পেলেই কেউ যাতে কারো সম্পদ কেড়ে না নেয় বা সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে না পারে অথবা বিনা কারণে কারো হাতে প্রাণ না যায় এমন নিরাপত্তা প্রত্যেকটি নাগরিকের অবশ্যই থাকতে হবে। এগুলি মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত।   

নাগরিক ও সুনাগরিক এর মধ্যে পার্থক্য 

নাগরিক ও সুনাগরিক এর মধ্যে পার্থক্য জেনে নিই। একজন ব্যক্তি কোন রাষ্ট্রে সীমানার মধ্যে বসবাস করলে এবং রাষ্ট্রীয় পরিচয় পত্রের মাধ্যমে নাগরিক হতে পারে এর জন্য বিশেষ কোনো গুণাবলীর প্রয়োজন হয় না। অনেক নাগরিক রাষ্ট্রীয় সামাজিক কর্মকান্ড নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে তারা কেবল তাদের ব্যক্তিগত জীবন এবং অধিকারভোগ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারে। একজন নাগরিক আইন মেনে চলতে বাধ্য তবে অনেক ক্ষেত্রে আইনের প্রতি তাদের যথেষ্ট শ্রদ্ধা নাও থাকতে পারে বা তারা আইন অমান্য করতে পারে।

একজন নাগরিক ব্যক্তিগতভাবে সমাজের অংশ হলেও সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা কম থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে। রাষ্ট্রের সদস্য হওয়ার জন্য নৈতিক গুণাবলী বাধ্যতামূলক নয়।একজন নাগরিক রাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন অধিকার ভোগ করে যেমন ভোটাধিকার সম্পত্তির অধিকার বাক স্বাধীনতার অধিকার ইত্যাদি তবে অনেক নাগরিক তাদের কর্তব্য সম্পর্কে উদাসীন থাকতে পারে বা যথাযথভাবে পালন নাও করতে পারে। রাষ্ট্রীয় সকল সদস্য নাগরিক তবে সকলের রাষ্ট্রের জন্য সমানভাবে মূল্যবান সম্পদ নাও হতে পারে। 

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের ২০টি দায়িত্ব ও কর্তব্য

অপরদিকে সুনাগরিক হওয়ার জন্য বিশেষ কিছু গুণাবলীর প্রয়োজন যথাঃবুদ্ধি,বিবেক ও আত্ম সংযম। একজন সুনাগরিককে অবশ্যই বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী হতে হবে। সঠিক জ্ঞান ও বিচার বিবেচনা মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রের সমস্যা গুলো বুঝতে পারবেন এবং সমাধানের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন।একজন সুনাগরিকের বিবেক জাগ্রত থাকতে হবে।

তিনি ন্যায়-অন্যায় বা ভালো-মন্দ সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা রাখবেন। তিনি সততা ও নীতিবোধের সাথে কাজ করবেন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন। একজন সুনাগরিককে অবশ্যই আত্মসংযমী হতে হবে। তিনি ব্যক্তিগত লোভ-লালসা,স্বার্থপরতা ও আবেগ দ্বারা পরিচালিত হবেন না। কোন বৃহত্তর সামাজিক স্বার্থের জন্য তিনি নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে দ্বিধাবোধ করবেন না এবং অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন।

একজন সুনাগরিক সর্বদা রাষ্ট্রীয় সামাজিক কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করতে ভূমিকা রাখেন এবং সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করেন। তিনি নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সর্বদা সচেতন থাকেন এবং অন্যদেরও সচেতন করতে থাকেন। একজন সুনাগরিক সবসময় আইন মেনে চলেন এবং আইনের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা থাকে। তিনি সবসময় মনে রাখেন যে, আইনের শাসন ছাড়া একটি সুস্থ ও সুশৃংখল সমাজ গঠন করা সম্ভব নয়। তিনি অন্য নাগরিকদেরও আইন মানতে উৎসাহিত করে থাকেন।

একজন সুনাগরিক উন্নত নৈতিক মূল্যবোধের অধিকারী হন। একজন সুনাগরিকের সততা, ন্যায়পরায়ণতা,সহমর্মিতা, পরোপকারিতা এবং দেশপ্রেম তার চরিত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়। তিনি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নীতি-নৈতিকতা অনুসরণ করেন। একজন সুনাগরিক রাষ্ট্রেের মূল্যবান সম্পদ। তার জ্ঞান, দক্ষতা ও দায়িত্ববোধ এবং সমাজকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। একটি রাষ্ট্রের অগ্রগতি অনেকাংশে নির্ভর করে তার সুনাগরিকদের উপর।   

নাগরিক হওয়া একটি আইনি প্রক্রিয়া এবং রাষ্ট্রীয় সদস্যপদ লাভের মাধ্যমে এটি অর্জিত হয়। তবে সুনাগরিক হওয়া একটি নৈতিক ও সামাজিক ধারণা আর এর জন্য প্রয়োজন হয় জ্ঞান বিবেক সংযোজন এবং সমাজের প্রতি গভীর দায়বদ্ধতা। একটি উন্নত প্রগতিশীল রাষ্ট্র গঠনে কেবল নাগরিক হলে যথেষ্ট নয় বরং অধিক সংখ্যক সুনাগরিকের প্রয়োজন হয়। সুনাগরিকরা তাদের দায়িত্বশীল আছেন মাধ্যমে একটি দেশকে স্থিতিশীলতা সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথে পরিচালিত করতে পারে। তাই প্রতিটি নাগরিকের উচিত সুনাগরিক হওয়ার জন্য সচেষ্ট হওয়া এবং সমাজের কল্যাণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা।

লেখকের মন্তব্যঃ সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের ২০টি দায়িত্ব ও কর্তব্য-সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য   

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের ২০টি দায়িত্ব ও কর্তব্য-সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আর্টিকেলে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য কেবল কাগজে-কলমে আবদ্ধ কোন বিষয় নয় বরং এটি একটি জীবন্ত অনুশীলন। প্রতিটি নাগরিক যখন তার অধিকারের পাশাপাশি সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন হয় এবং সে অনুযায়ী আচরণ করে, তখনই একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ জাতি গড়ে ওঠে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সুনাগরিক হওয়ার পথ খুব সহজ নয় কারণ এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা সচেতনতা নৈতিক মূল্যবোধ এবং সমাজের প্রতি গভীর অঙ্গীকার। আসুন, আমরা প্রত্যেকেই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হই  এবং একটি উন্নত সমৃদ্ধ ও ন্যায় ভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখি।  কারণ একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার সুনাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর। আমরা আমাদের এবং বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের কাছে, তার নাগরিকদের কাছে মানবিক দায়িত্বশীলতা কামনা করি।  




































 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url